
বছরের পর বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণে উন্নত প্রযুক্তির অভাব মিটেছে ফরিদপুরের চাষিদের। পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিনামূল্যে এয়ার ফ্লো মেশিন দিচ্ছে, যা ব্যবহার করলে নষ্ট হতে যাওয়া পেঁয়াজের অন্তত ৩০ শতাংশ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। চাষিদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে ফরিদপুর জেলা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় পেঁয়াজ চাষিরা বছরে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে জেলার ৫০০ চাষিকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিন দিচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ শেষে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে। পেঁয়াজ চাষিরা বলেন, ‘উৎপাদন অনুযায়ী যে পরিমাণ পেঁয়াজ হয়, তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। সংরক্ষণের অভাবে আমাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তবে এই মেশিনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করলে পেঁয়াজ আট মাস পর্যন্ত ভালো অবস্থায় থাকবে এবং ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হবে।’
চাষিদের ক্ষতি কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘৫০০ মেশিন ব্যবহার করে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। এর ফলে যেসব পেঁয়াজ আগে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন পচে নষ্ট হতো, তা রক্ষা করা সম্ভব হবে।’
সঠিকভাবে এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ। ঢাকা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, তা যথেষ্ট-প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন। তবে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কারণে ঘাটতি দেখা দেয়। যদি পেঁয়াজ পচে না যায়, তাহলে ঘাটতি হবে না এবং আমাদের কারো ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না।’
সারাদেশে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জেলায় ৩ হাজার ৭০০ চাষিকে এয়ার-ফ্লো মেশিন প্রদান করা হবে। ভবিষ্যতে আরও চাষিকে মেশিন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। পেঁয়াজ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে কৃষকের একটি চুক্তি বা অ্যাগ্রিমেন্ট হবে। এরপর কোম্পানি কৃষকের বাড়িতে মেশিন সেট করবে। মেশিন হস্তান্তরের পর উপজেলায় থাকা ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এটি যাচাই করে আমাদের কাছে প্রত্যায়ন পাঠাবে। সেই প্রত্যায়ন পাওয়ার পরই কৃষকের অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান করা হবে।’
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিটি মেশিনের জন্য খরচ হচ্ছে ২৭ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৫:৪৭ ৫ বার পঠিত