নতুন বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, চীন যে বার্তা দিল

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » নতুন বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, চীন যে বার্তা দিল
বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫



নতুন বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, চীন যে বার্তা দিল

চীনের সামরিক প্রদর্শনীতে হাজির হয়ে যেসব বিশ্বনেতা সবচেয়ে বেশি আলো কাড়লেন শুরুতেই তাদের দিকে নজর দেওয়া যাক। তালিকাটা দীর্ঘ নয়, মাত্র দুজনের। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। সঙ্গে স্বাগতিক দেশ হিসেবে অবধারিতভাবেই আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। যারা দীর্ঘ সময় ধরে নিজ দেশ শাসনের দায়িত্বে আছেন।

সামরিক প্রদর্শনীটি হলো সেই তিয়েনআনমেন স্কয়ারে। যেখানে ১৯৮৯ সালে কয়েক হাজার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়েছিল। নিহত হয় বহু মানুষ। এমন একটি ঐতিহাসিক স্থানে এবারের সামরিক কুচকাওয়াজের উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিপক্ষে চীনের জয়ের ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন।

জাপান, যারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাদের বিরুদ্ধে জয়ের মুহুর্ত স্মরণ অনুষ্ঠানে চীন দেখাল তাদের সামরিক শক্তি। যেখানে তুলে ধরা হয়, নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, পানিতে চলাচলে সক্ষম ড্রোন, যুদ্ধবিমান, প্রাথমিক সতর্কতা বিমান এবং বিমান জ্যামিং সিস্টেম। আরও ছিল দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র।

নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা ও ভয়কে জয়
প্রদর্শনীতে শি জিনপিংয়ের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্টের বার্তাটি একেবারে স্পষ্ট। সেটি হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বিশ্ব ব্যবস্থার দিন শেষ হয়েছে। এখন, চীন একটি বিশ্ব ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেটিকে তারা নতুন বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে। আর এই ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত কিছু পররাষ্ট্রনীতির কারণে।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিশ্লেষক ইয়ান চং আল জাজিরাকে বলছেন, এমন প্রদর্শনীর পেছনে শি জিনপিংয়ের একটি উদ্দেশ্য আছে। সেটি হলো চীন একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে গড়ে উঠছে সেটি বোঝানো। এই প্রদর্শনীর সময় বিশ্বের অন্য দেশের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এটিরও অর্থ আছে। সেটি কোনো চাপ বা ভয় তৈরি করা নয়, বরং এটি বোঝানো যে এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে ভীত নয়।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শি জিনপিং নিজেও তাঁর বক্তব্যে কাউকে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘চীনারা একটি মহান জাতি। তারা কোনো স্বৈরাচারকে ভয় করে না, বরং নিজের পায়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে জানে।’

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে শি জিনপিং ছাদ খোলা একটি লাল রঙের লিমুজিন গাড়িতে করে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির সৈন্যদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এই লাল রং চীনের পতাকা, মাও সেতুংয়ের যুগ এবং লিমুজিন গাড়িটি শিল্পনির্ভর উচ্চাভিলাষকে মনে করিয়ে দেয়। পরিদর্শনের সময় শি জিনপিং উচ্চস্বরে বলেন, ‘কমরেড, তোমাদের শুভেচ্ছা জানাই। তোমরা কঠোর পরিশ্রম করছো।’ জবাবে চীনা সেনারা একযোগে উত্তর দেন, ‘পার্টির (কমিউনিস্ট) নেতৃত্ব অনুসরণ করো, জয়ের জন্য লড়াই করো।’ এর পরপরই সেনারা তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রদর্শনের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যানের দিকে এগিয়ে যান।

পুতিন-কিমের উপস্থিতি
যুদ্ধকে যোগসূত্র ধরলে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের ভিত্তি পাওয়া যায়। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে পুতিন ও কিমের ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি নজরে এসেছে। উত্তর কোরিয়া কয়েক হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে রাশিয়ায়। যারা রুশ আগ্রাসনে যোগ দিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছে।

অপরদিকে কোরিয়ান যুদ্ধের স্মৃতি কাছে এনেছে চীন ও উত্তর কোরিয়াকে। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজের উত্তর এশিয়া প্রতিনিধি জেমস ওটেন লিখেছেন, কোরিয়ান যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সফল আক্রমণের পর উত্তর কোরিয়ার সেনারা পিছু ফিরতে বাধ্য হয়। ওই সময় চীন উত্তর কোরিয়ার সমর্থনে হাজার হাজার সেনা পাঠায়।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জোসেফ টোরিগিয়ান বলেছেন, চীন-রাশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিও দেশ দুটিকে একটি বিন্দুতে এসেছে। এই দুই দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে তাদের ত্যাগের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে। পাশাপাশি যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে তাদের তৎপরতাকে ন্যায্যতা হিসেবে দেখে। তারা বিশ্বাস করে, আধিপত্যবাদী শক্তি এখনও তাদের ওপর বিদেশি মডেল চাপিয়ে দিচ্ছে এবং বিশ্বে তাদের ন্যায্য অবস্থানকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখন, তারা যুদ্ধের স্মৃতি ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পশ্চিমা মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায়।

ট্রাম্পের জবাব
শি জিনপিংয়ের এই সামরিক শক্তি প্রদর্শন ও সেখানে পুতিন-কিমের উপস্থিতির জবাব দিতে ছাড়েননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মিত্র ছিল। প্রায় আড়াই লাখ আমেরিকান ‘চীন-বার্মা-ভারত’ থিয়েটার নামে পরিচিত অঞ্চলে লড়াই করেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে বুধবার ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, চীন এই ভূমিকার কথা আর স্মরণ করছে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, আপনারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তখন, দয়া করে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উনকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, প্রকৃতপক্ষে এশিয়ায় সামরিক উত্থানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে চীন। তাই বুধবারের সমারিক প্রদর্শনীতে শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি স্মরণই মূখ্য ছিল না। বরং পশ্চিমের প্রতি চীনের অপ্রতিরোধ্য উত্থান সম্পর্কে একটি বার্তা ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৩:৫০   ৪ বার পঠিত  




আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


নতুন বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, চীন যে বার্তা দিল
ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভে নেমেছে ইন্দোনেশিয়ার নারীরা
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ৮শ’র ও বেশি নিহত
আমাদের সম্পর্কে ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িত, জিনপিংকে মোদি
মালয়েশিয়ার ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত



আর্কাইভ