বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট)। ১৯৪৫ সালের এ দিনে তিনি দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদার দম্পতির তৃতীয় সন্তান খলেদা জিয়া। জন্মদিনের এই দিনে বিএনপির প্রধান গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন।
কয়েক বছর ধরে খালেদা জিয়ার নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত আছে বিএনপি। আজও কেক কেটে জন্মদিন পালন না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জন্মদিন উপলক্ষে দলীয় প্রধানের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনায় আজ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হবে। অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
তবে খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা বা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান না করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় এবং একই সঙ্গে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জীবনদানকারী শহীদ, ৯০-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ও ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের আশু সুস্থতা কামনায় বিএনপির উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয় অথবা মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: সুস্থ থাকলে বেগম জিয়াও নির্বাচন করতে পারেন: আবদুল আউয়াল মিন্টু
পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে। ১৯৬০ সালের আগস্টে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন খালেদা জিয়া।
এ দম্পতির দুই সন্তান, তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর এবং ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট আরাফাত রহমান কোকোর। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেন। ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মানুষ।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। এর পরপরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন।
পরে তৎকালীন সরকারবিরোধী দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। ওয়ান-ইলেভেনের পর মউনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের আমলে তিনি কারাবন্দি হন। পরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির অভিযোগে কারাদণ্ড হলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আবারও বন্দি করা হয়।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। সেই থেকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ৬ মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছিল তৎকালীন সরকার।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল করে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি।
৮১ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি লন্ডন যান।
লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় যান। টানা ৪ মাস চিকিৎসা শেষে মে মাসে ঢাকায় আসেন। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৬:০৯ ৫ বার পঠিত