
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন; আমাদের ভূমি কম, মুল্য বেশি এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা;বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত ব্যবহারের পরিকল্পনা করা; যেমন আবাসিক এলাকার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব কমানো। এতে কৃষি জমি সুরক্ষিত হবে ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি ভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভূমির জোন ভিত্তিক পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাই কাম্য ।
আজ ভূমি মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে প্রস্তাবিত ‘ভূমি জোনিং ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত আন্ত:মন্ত্রণালয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যগণের উপস্থিতিতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
সভায় জানানো হয়; ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন, উন্নয়নমূলক কার্য, শিল্প কারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রাকৃতিক কারণে প্রতিনিয়তই ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণি পরিবর্তন হইতেছে, দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি ভূমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট ভূমির ৫৯.৭% কৃষি জমি,১৭.৪% বনভূমি এবং ২০% জলাভূমি। এ বাস্তবতায় ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য “ভূমি জোনিং ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ” অপরিহার্য।
কোনো রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করিয়া অননুমোদিতভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বা কোনো হাউজিং সোসাইটি কর্তৃক কৃষি জমিতে অননুমোদিতভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হাউজিং এস্টেট তৈরি করা হইলে বা হাউজিং এস্টেট তৈরির উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ কৃষি জমি দখল করিয়া রাখিলে বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা কোম্পানি বা শিল্প মালিক,রিসোর্ট, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, পুঁজিপতি বা কোনো এনজিও বা কোনো ক্লাব কৃষি কাজ ব্যতীত বাণিজ্যিক বা বিনোদন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অননুমোদিতভাবে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণের অধিক কৃষি জমি দখল করিয়া রাখিলে এইরূপ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সোসাইটি বা এনজিও বা ক্লাব বা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন,২০০৯ এর ৫৯ নং এর মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচার হবে। আইনটি শীগ্রই চুড়ান্ত করা হবে।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান; ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো: শরিফুল ইসলাম; অতিরিক্ত সচিব(জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগ) সায়মা ইউনুস,অতিরিক্ত সচিব (আইন অনুবিভাগ) মো: আব্দুর রউফ,এনডিসি;অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো: এমদাদুল হক চৌধুরী;অতিরিক্ত সচিব(মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ।
পরে রাজধানীর কাটাবনে ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্রে নবনিযুক্ত সহকারী কমিশনার( ভূমি) গণের ‘৪৩ ও ৪৪ তম বেসিক ভূমি ব্যবস্থাপনা কোর্সের’ সমাপনী ও সনদ বিতরনী অনুষ্ঠান বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব।
তিনি বলেন; ভূমি মন্ত্রণালয় পূর্বের নিয়মতান্ত্রিকতা হতে বেড় হবে আধুনিক ও ডিজিটাল ধারায় প্রবেশ করেছে। ভূমিসেবা একটি পবিত্র দায়িত্ব। কর্মে সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে। আর্দশ মানুষ হতে হবে। থাকতে হবে তীক্ষ্ণ সাধারণ জ্ঞান। সবার আগে সরকারের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এই প্রশিক্ষণ থেকে যে আলোর পথ দেখানো হলো সেই আলোতেই সর্বত্র আলোকিত করতে হবে। অধস্তনদের ওপর নির্ভর থাকা যাবে না। সততা রাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। সবাইকে মিলেই এই দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন; এখানের সবাই ডিসি হবেন না,সবাই সচিব হবেন না। মনে রাখবেন আপনি হবেন। এখন থেকেই সেভাবে পেশাদারিত্ব ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অহংকার থাকবেনা। ভদ্রতা দিয়ে মানুষকে সন্তুষ্ট করতে হবে। সর্বপরি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হবে। জুলাই -আগষ্টের চেতনা ধারণ করে দেশ গড়বো।
আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয় সিনিয়র সচিব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান(সচিব) এজেএম সালাউদ্দিন নাগরী; ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড.মো: মাহমুদ হাসান; মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানসহ কোর্স পরিচালক রুমানা রহমান শম্পা ।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৮:১৫ ২ বার পঠিত