যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ এলাকায় তিন উপদেষ্টার সফরের পর আশায় বুক বাঁধছেন ভুক্তভোগী তিন উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষ।
সফরকালে উপদেষ্টারা এই এলাকার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
উপদেষ্টারা ভবদহ সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন, যা স্থানীয় জনগণকে আশাবাদী করে তুলেছে।
তারা মনে করছেন, বর্তমান সরকার তাদের এই সমস্যার সমাধান করবে।
গত ২২ এপ্রিল পানি সম্পদ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেন।
সফরকালে তারা স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা এ সমস্যার একটি টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (ডব্লিউডিবি) ষাটের দশকের প্রথমদিকে জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলায় প্রায় অর্ধ লক্ষ হেক্টর ফসলি জমিকে লবণাক্ত পানির প্রবেশ থেকে রক্ষা করার জন্য ভবদহ এলাকায় টেকা ও হোরি নদীতে ৩৩টি ভেন্টসহ তিনটি স্লুইস গেট নির্মাণ করে।
এরপর প্রায় ২৫ বছর ধরে স্থানীয়রা এই স্লুইস গেটগুলোর পূর্ণ সুবিধা ভোগ করেছে। এই স্লুইস গেটগুলোর কারণে লবণাক্ত পানির প্রবেশ প্রতিরোধ করে, তারা নিজেদের কৃষি জমিতে চাষ করতে পেরেছিল এবং তাতে বিভিন্ন জাতের বিপুল পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হয়েছিলো।
উজান ও নিম্ন প্রবাহে নদীর তলদেশ পলি মাটিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারী উদ্যোগ সত্ত্বেও আট থেকে দশ বছর ধরে এই সমস্যা অব্যাহত থাকার কারণে, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভবদহ স্লুইস গেটের উজানে জলাবদ্ধতা শুরু হয়।
গত বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। ওই সময়ে জলাবদ্ধতার কারণে তিনটি উপজেলার ২০০ গ্রামের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পর, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই এলাকা থেকে জমে থাকা পানি অপসারণের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে তিনি দু’বার এলাকাটি পরিদর্শনও করেন। তিনি সমস্যার তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী সমাধানের জন্য বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন।
অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের বাসিন্দা অলোক বিশ্বাস বাসস-কে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্ব ও সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা দেখে তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, ‘মাত্র কয়েক মাস আগেও আমার পরিবার আর কয়েক হাজার মানুষ পানির নিচে ছিল। কিন্তু সরকারি পদক্ষেপের কারণে এখন আমরা শুকনো জমিতে বসবাস করছি।’
সরকার ইতিমধ্যেই আমডাঙ্গা খাল পুনঃখনন ও প্রশস্তকরণ শুরু করেছে। সেইসঙ্গে ভবদহের উজান ও নিম্ন প্রবাহকে টেনে আনা হচ্ছে এবং সেচের জন্য ভারী পাম্পের মাধ্যমে জমে থাকা পানি অপসারণ করা হচ্ছে।
মণিরামপুর উপজেলার মুক্তেশ্বরী ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক চৈতন্য কুমার পাল বলেন, গত বছর ২৫,০০০ হেক্টরেরও বেশি কৃষি জমিতে পানিতে তলিয়ে যায়। কিন্তু পানি সম্পদ উপদেষ্টার সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এ বছর কৃষকরা ১৬,৫৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করতে পেরেছেন।
সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বাসস-কে বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য তিনজন উপদেষ্টা এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সফরটি অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিক থেকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়াকে ইঙ্গিত করছে।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এলাকায় নদী ও খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এবং সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন হিসেবে ইতোমধ্যেই আমডাঙ্গা খাল খনন ও প্রশস্তকরণের জন্য টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে।
‘জোয়ার নদী ব্যবস্থাপনা’ (টিআরএম) অবিলম্বে চালু করার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক জরিপ দ্রুত এগিয়ে চলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটিও একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত।
প্রভাষক চঞ্চল রায়-কে বলেন, তিনজন উপদেষ্টার ভবদহ পরিদর্শনের পর ভবদহ সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় জনগণ আশাবাদী হয়ে উঠেছে।
তিনি এ অঞ্চলের সবচেয়ে জলাবদ্ধ এলাকা মশিয়াহাটির বাসিন্দা।
আসন্ন বর্ষাকালে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা থেকে এলাকাকে রক্ষা করার জন্য তিনি সরকারের কাছে ভবদহের উজান থেকে অবশিষ্ট জমে থাকা পানি বের করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সেচ পাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং অবিলম্বে উজান ও নিম্নাঞ্চলের নদীগুলো ড্রেজিং করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৩:২৮ ৪ বার পঠিত