শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খুলনায় চাষ হচ্ছে মরুভূমির ফল সাম্মাম

প্রথম পাতা » খুলনা » খুলনায় চাষ হচ্ছে মরুভূমির ফল সাম্মাম
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫



খুলনায় চাষ হচ্ছে মরুভূমির ফল সাম্মাম

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হলো মরুভূমির ফল হিসেবে পরিচিত সাম্মাম বা রক মেলন। ঘেরের উপর মাচায় ঝুলছে ফল, যার স্বাদ ও গন্ধ অনেকটা তরমুজের মতো হলেও আলাদা মিষ্টতার কারণে বাজারে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, খরচ তুলনামূলক কম হলেও লাভ হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এটি আগামীতে কৃষকদের জন্য সম্ভাবনাময় একটি বিকল্প ফসল হয়ে উঠতে পারে।

ফুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. শাহিন উদ্দিন গাজী বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম মরুভূমির ফল আমাদের এলাকায় চাষ সম্ভব নয়। তারপর দুই বিঘা জমিতে সাম্মাম লাগাই। খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখন ফলন দেখে মনে হচ্ছে, প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল পেয়েছি। বাজারে ভালো দামও পাচ্ছি। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করব।’

তরমুজ চাষের মতোই এ ফলের চাষ করতে হয়। সাধারণত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজ রোপণ করা হয় এবং ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, আর বিক্রি হয় এক লাখ টাকারও বেশি। কৃষকরা বলছেন, অল্প সময়েই ফসল ঘরে তোলায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে কৃষি অফিসের সহায়তা পেলে আরও বড় আকারে চাষ করা সম্ভব।

অন্য কৃষক মো. গোলাম রসুল শেখ বলেন, ‘সাম্মাম চাষে খরচ কিছুটা বেশি হলেও লাভ আশানুরূপ। বিঘা প্রতি আয় হচ্ছে এক লাখ টাকারও বেশি। বাজারে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কৃষি অফিস যদি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেয়, তাহলে আমাদের মতো অনেক কৃষক এ চাষে আগ্রহী হবে।’

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ডুমুরিয়ার পাশাপাশি বটিয়াঘাটা, দাকোপ, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলাতেও সাম্মামের চাষ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে এ ফলের কেজি প্রতি দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত মিলছে। রাজধানীসহ বড় শহরের বাজারেও এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আদনান বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকদের আমরা সাম্মাম চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষকদের চাহিদা থাকলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। এ মৌসুমে সরকারি সহায়তা করা সম্ভব হয়নি, তবে আগামীতে প্রণোদনা ও বিনামূল্যে বীজ সরবরাহের চেষ্টা থাকবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। এ বছর ডুমুরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৭ হেক্টর জমিতে সাম্মাম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হেক্টরের ফসল ইতোমধ্যে কাটা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি সম্ভাব্য ফলন ২৪ মেট্রিক টন হিসেবে মোট উৎপাদন হতে পারে প্রায় ৪০৮ মেট্রিক টন। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নত হলে সাম্মাম চাষ আগামীতে একটি লাভজনক কৃষি খাতে পরিণত হবে।’

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুলনা অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে সাম্মাম ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। তবে মানসম্মত বীজ, সঠিক পরিচর্যা ও বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয়া জরুরি। সরকারি সহায়তা ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে সাম্মাম চাষ শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই নয়, সারা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সক্ষম হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:২৮:৪৭   ৯ বার পঠিত