জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভেটা গণনায় হযবরল অবস্থা। অস্বাভাবিক বিলম্বে ৩৩ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। অপেক্ষার সঙ্গী হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মী-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জাকসুর মতো দেশের যে কোনো ঘটনায় ছুটে যান সংবাদকর্মী, পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোটগ্রহণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন সাংবাদিকরা। চরম অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও পিছপা হননি কেউ।
জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের ৩৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনো ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ফলাফলসহ প্রতি মুহূর্তের নানা খবরাখবর জানাতে গণনা কক্ষের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন সংবাদকর্মীরা। ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ ও আক্ষেপের সুর তাদের কণ্ঠেও।
তেমনই শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একই অবস্থা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের পর ক্লান্তির ছাপ তাদের চোখে মুখে।
একই অবস্থা ভোট গণনার কাজে সংশ্লিষ্টদেরও। একদিকে হাতে ভোট গণনা তারওপর লোকবল কম থাকায় বিশ্রামহীনভাবে চলছে কাজ।
সিনেট ভবন, বটতলাসহ পুরো ক্যাম্পাসে এলইডির সামনেই রাত কাটিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অপেক্ষা চূড়ান্ত ফলাফলের।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ১০ম জাকসু নির্বাচন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের সংসদ নির্বাচনও হয়।
সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলে ৫টা পর্যন্ত। অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল। একই সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানায়। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরাও কারচুপি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক দোষারোপ হিসেবে দেখছেন এবং শেষ সময় পর্যন্ত ভোটগ্রহণে অংশ নিয়েছেন।
ওইদিন রাত ১০টা ১০ মিনিটে ভোট গণনা শুরু হয়। শুক্রবারও দিনভর ভোট গণনায় দুই দফা বিরতি দেয়া হয়। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার সকালে দায়িত্বপালনের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পোলিং অফিসার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এরপরই ভোট গণনায় আরও ধীরগতি বাড়ে।
এদিকে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে নির্বাচন কমিশনের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।
মুহূর্তেই এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষার্থীরা। সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট অভিযোগ করেন, জাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র সফল না হওয়ায় বিএনপিপন্থি শিক্ষক মাফরুহী সত্তার পদত্যাগ করেছেন। এই ঘটনাকে দায়িত্বহীনতা আখ্যা দিয়ে নিন্দাও জানায় সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।
একইদিন ধীর গতির পরিপ্রেক্ষিতে ভোট গণনা বন্ধ রেখে জরুরি বৈঠক করেন জাবির ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান। পরে টেবিল বাড়ানোর পাশাপাশি অধিক জনবল কাজে লাগিয়ে গণনায় গতি বাড়ানোর কথা বলেন তিনি। রাতের মধ্যে ভোট গণনা সম্পন্ন হবে এবং যথারীতি ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৭ জন। বিভিন্ন পদে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৬:০৯ ৬ বার পঠিত