নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাবিনা আক্তার লাকি (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামি নীরব ওরফে নাজিমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার তিমিরকাঠি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে অবস্থিত র্যাব-১১ ব্যাটেলিয়ান সদর দফতরের স্কোয়াড কমান্ডার মো. শামসুর রহমান।
গ্রেফতার নীরব ওরফে নাজিম (৪২) ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার খানবাড়ি (রামকেশর) এলাকার চান্দু খাঁ’র ছেলে।
এর আগে, গত ১৩ আগস্ট (বুধবার) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কলোনির পাশে একটি টিনশেডের ভাড়া বাসা থেকে গৃহবধূ সাবিনা আক্তার লাকির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। নিহতের গলায়, গালে ও ঘাড়ের পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত সাবিনা আক্তার লাকি রাজধানীর ওয়ারী থানার গোপীবাগ এলাকার মৃত শামসুল হকের মেয়ে এবং একই এলাকার আর কে মিশন রোডের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে মো. রুবেলের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত নীরব ওরফে নাজিম গত তিন বছর আগে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) স্টাফ কলোনির পাশে টিনশেডের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। নিহত সাবিনা আক্তার লাকি গত ছয় মাস ধরে রুবেলের স্ত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন সময় নীরবের বাসায় আসা যাওয়া করেছেন। মরদেহ উদ্ধারের আগের রাতেও সাবিনা আক্তার লাকিকে রুবেলে বাসায় দেখা গেছে। তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানীর ওয়ারী থানার গোপিবাগ আর কে মিশন রোডের বাসিন্দা রুবেলের সঙ্গে গত ১৮-১৯ বছর আগে একই এলাকার সাবিনা আক্তার লাকির ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে ও তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রুবেল গ্রিল ওয়ার্কশপে কাজ করেন। গত ৮ আগস্ট সকালে সাবিনা আক্তার লাকি আগের মতোই স্বামী রুবেলকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ঘটনার ৫ দিন পর ১৩ আগস্ট সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কলোনির পাশে একটি টিনশেড ঘর থেকে লাকির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের খবর পান স্বামী রুবেল।
পরে এ ঘটনায় নিহত সাবিনা আক্তার লাকির স্বামী মো. রুবেল বাদী হয়ে নীরব ওরফে নাজিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২-৩ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলায় বাদী রুবেল অভিযোগ করেন, আসামি নীরব ওরফে নাজিম তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার লাকিকে ফুঁসলিয়ে তার ভাড়া বাসায় এনে পরিকল্পিতভাবে জবাই করে হত্যা করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-১১ ব্যাটেলিয়ান গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এর আভিযানিক দল নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি নীরব ওরফে নাজিমের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে শনিবার রাতে ঝালকাঠি জেলায় অভিযান চালিয়ে নীরবকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সাবিনা আক্তার লাকিকে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
মামলার পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গ্রেফতার আসামি নীরব ওরফে নাজিমকে রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও র্যাব জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৯:০২ ৬ বার পঠিত