ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও বিধ্বস্ত গাজায় বোমা হামলা চালিয়ে আল জাজিরার পাঁচ সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর মধ্যে আল জাজিরা আরবির প্রতিবেদক আনাস আল শরীফও রয়েছেন।
রোববার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে একটি তাঁবুতে এ হামলা চালালে তারা নিহত হন।
হামলায় নিহত অন্য সংবাদকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন আল জাজিরার সংবাদদাতা মোহাম্মদ কুরেইকেহ ও ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া।গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালের কাছে একটি তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালালে তারা নিহত হন।
২৮ বছর বয়সি আনাস আল শরীফ ছিলেন আল জাজিরা আরবির পরিচিত মুখ। তিনি গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ইসরাইলের হামলা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করছিলেন।
নিহত হওয়ার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শরীফ লেখেন, গাজা সিটির পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে তীব্র ও লক্ষ্যকেন্দ্রিক বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরাইল। এ ধরনের বোমাবর্ষণ ‘ফায়ার বেল্ট’ নামে পরিচিত।
শরীফের শেষ ভিডিওটি রাতে ধারণ করা। ভিডিওতে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র আওয়াজ শোনা যায়। হামলার পর মুহূর্তে কমলা আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে গাজার রাতের আকাশ।
গত ৬ এপ্রিল শরীফের লেখা একটি শেষ বার্তা এক্সে শেয়ার করা হয়েছে। মৃত্যুর পর প্রকাশের জন্য তিনি বার্তাটি রেখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, যন্ত্রণার সব রূপ অনুভব করেছেন এবং বারবার শোক ও ক্ষতির স্বাদ পেয়েছেন।
তিনি আরও লিখেন, তবুও, আমি কখনও বিকৃতি বা ভুল উপস্থাপনা ছাড়াই সত্যকে যেমন আছে তেমন প্রকাশ করতে দ্বিধা করিনি, আশা করেছিলাম আল্লাহ যেন তাদের সাক্ষী থাকেন যারা নীরব থেকেছেন, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছেন এবং যারা আমাদের নিঃশ্বাস রোধ করেছেন।
তিনি লিখেন, ‘আমাদের শিশু এবং নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহও তাদের হৃদয়কে নাড়া দেয়নি বা দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের জনগণ যে গণহত্যার শিকার হচ্ছে তা থামাতে পারেনি।’
শরীফ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, স্ত্রী বায়ান, ছেলে সালাহ এবং মেয়ে শামকে রেখে হয়তো চলে যেতে হতে পারে। ছেলে-মেয়ের বড় হওয়াটা হয়তো তিনি দেখে নাও যেতে পারেন। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
শেষ লাইনে তিনি লেখেন, ‘গাজাকে ভুলে যেও না… আর তোমাদের আন্তরিক দোয়ার মধ্যে আমাকে ভুলে যেও না।’
এদিকে এক বিবৃতিতে ইসরাইলি হামলায় পাঁচজন সংবাদকর্মীর নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এই হত্যাকাণ্ড সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আরেকটি স্পষ্ট এবং পূর্বপরিকল্পিত হামলা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলার ভয়াবহ পরিণতির মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বেসামরিক নাগরিকদের নির্মম হত্যা, জোরপূর্বক অনাহার এবং সমগ্র সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৪:২৮ ৬ বার পঠিত