
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। এর মধ্যে সংস্কার এবং বিচারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস সচিব আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট এর পরে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। এই দ্বিতীয় অধ্যায়ের আজ ছিল উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভা। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ট্যারিফ কমানোর জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং গত এক মাস জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর বিভিন্ন কর্মসূচি সুচারুরূপে বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হল। এখন নির্বাচন কমিশন দিনক্ষণ ঠিক করবে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে তারা তাদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি আনসার বিডিআর এবং আর্মিকে কিভাবে আরো বেশি করে সংযুক্ত করা যায় সেটাও সরকার আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনকালে গত বছর আমাদের খাদ্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ টন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই মজুদ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ টনে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল গত এক বছরে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার সাতটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশনের প্রস্তাব মতে ১২১ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৬ টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৮৫টি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। বাকি ১০ টি আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কি না সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রেস সচিব বলেন, গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন নিয়ে একটি দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। আজকের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ আগের চেয়ে অনেক একটিভ হয়েছে এবং যেহেতু একটি অন্তর্বর্তী সরকার চলছে সেজন্য আর্মিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, ফরেন রিজার্ভ বেড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই তার বিচার কাজ সম্পন্ন হোক। আমাদের বৈদেশিক উপদেষ্টাও বলেছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিবিসি এবং আলজাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রটেষ্টরদের (আন্দোলনকারীদের) গুলি করে মারার বিষয় কিভাবে নির্দেশ দিয়েছে আপনারা সেই রিপোর্টগুলোতে দেখেছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই শেখ হাসিনার বিচার করা হবে।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার এবং বিচারও সরকারের অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রয়েছে। তিনি বলেন, আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি ৮ লাখের মতো ফোর্স মোতায়েন ছিল। এবার জাতীয় নির্বাচনে আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার বেশি ফোর্স মোতায়েন করা যায় কি না এবং আর্মি আরও ৬০ হাজার মোতায়েন করা যায় কি না তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৩১৫ টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২৪৭ টির বাস্তবায়ন হয়েছে। যা শতকরা প্রায় ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এবং এটি গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাধীনতার পরের কোন সরকারের জন্য এটি রেকর্ড।
জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামীর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে কারো কোন অভিযোগ থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:০২:৪৫ ৪ বার পঠিত