টেক্সাসের পর এবার ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোও। এরই মধ্যে অঙ্গরাজ্যটির বেশকিছু এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ (এনডব্লিউএস)।
বুধবার (৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
গত শুক্রবার (৪ জুলাই) থেকে টেক্সাসে আকস্মিক বন্যা শুরুর পর এ পর্যন্ত ১০৯ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্তত ১৬১ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগের অস্থায়ী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিউ মেক্সিকোর রুইডোসো এলাকায় নদীর পানির উচ্চতা এক ঘণ্টারও কম সময়ে ৩ ফুটেরও কম থেকে রেকর্ড ২০ দশমিক ২৪ ফুট (৬.১ মিটার) উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে সেখানে নদীর পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৫ দশমিক ৮৬ ফুট রেকর্ড করা হয়েছিল।
আকস্মিক এই বন্যার ফলে আশেপাশের সমস্ত জলাধার, সেতু ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পরিস্থিতিকে ‘জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ’ বলে অভিহিত করেছে এনডব্লিউএস।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যে আকস্মিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর আসেছে রুইডোসো এলাকা থেকে। দক্ষিণ নিউ মেক্সিকোর একটি পাহাড়ি গ্রাম, যা আলবুকার্ক থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা দক্ষিণে অবস্থিত।
গ্রামটির জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নদীর কাছের মানুষদের অবিলম্বে উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ও বন্যার জলের মধ্য দিয়ে গাড়ি চালানোয় সতর্ক করেছে।
ওই এলাকায় দাবানলে ক্ষতির চিহ্ন এখনো মেটেনি। এরইমধ্যে নদী, খাল ও খাদে বন্যার তীব্রতা বেশি হওয়ার সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। এছাড়া গ্যাভিলান ট্রেলার পার্কে একাধিক উদ্ধারকাজ চলছে এবং বাড়িঘর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আহত বা মৃত্যুর খবর নিশ্চিত না করলেও অসংখ্য মানুষ নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছেন ওই এলাকার মেয়র।
আলবুকার্ক এলাকার এনডব্লিউএস একটি এক্স পোস্টে জানিয়েছে, রিও রুইডোসোতে বন্যার ঢেউ ১৫ ফুট (৪.৫ মিটার) উঁচুতে পৌঁছে যায়।
অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে বন্যার ভিডিও শেয়ার করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাটলিন কারপেন্টার নামের এক ব্যক্তির শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গাঢ় বাদামী বন্যার পানির স্রোত একটি বাড়িকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কিত প্রত্যক্ষদর্শীরা ভবনটি ছাদ পর্যন্ত ডুবে থাকতে দেখেছেন। এটি নিউ মেক্সিকোর ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে।
রুইডোসো গ্রামের সরকারি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্যাস লিকেজ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। গ্রামের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ঈগল ড্রাইভ এলাকায় গ্যাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ক্ষতির পরিমাণ বা কখন মেরামত হবে তা এখনো জানা যায়নি।
ওই এলাকার বাসিন্দারা নানা রকম পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে দিচ্ছেন। একজন ফেসবুকে লিখেছেন, পুরো শহরের মধ্যভাগ থেকে গ্যাসের মতো গন্ধ।
অনেকে আবার বন্যা কবলিত আস্তাবলের ছবি শেয়ার করে ঘোড়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন। কারণ সামনের সপ্তাহেই রুইডোসো ডাউনসে ঘোড়া দৌড় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় রেডিওতে সরাসরি কথা বলেছেন রুইডোসোর মেয়র লিন ক্রফোর্ড। সেখানে তিনি বলেন, পরিস্থিতি খুব দ্রুত খারাপ হয়ে গেলো। আমরা কেবল প্রার্থনা করছি যে পানি কমে যাক। উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করতে ফেডারেল তহবিলের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
রুইডোসো গ্রামের মিডিয়া কন্টাক্টর কেরি গ্ল্যাডেন বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে বলেন, রুইডোসোতে তাদের আপার ক্যানিয়ন এলাকায় স্থানীয় সময় দুপুর তিনটা থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়, যার ফলে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়। নিখোঁজ মানুষ এবং আহতদের কোনো হিসাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন গ্ল্যাডেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৫৩:৩২ ৮ বার পঠিত