রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

তীব্র গরমে হাজিদের আরামে সৌদি সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » তীব্র গরমে হাজিদের আরামে সৌদি সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫



তীব্র গরমে হাজিদের আরামে সৌদি সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ

২০২৫ সালে হজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন সৌদি আরবের অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

প্রচণ্ড গরম ও গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহে হজের গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা বিশেষ করে আরাফাতের দিন, মুজদালিফায় রাতযাপন ও জামারায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ হাজিদের জন্য শারীরিকভাবে কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সৌদি সরকার নানা অত্যাধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গল্ফ নিউজের বরাতে জানা যায়, ২০২৩ সালে প্রবর্তিত কুলড রোডস ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পকে আরও সম্প্রসারিত করে ২০২৫ সালের হজ উপলক্ষে আরাফাত ময়দানে ৮৪,০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ঠান্ডা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮২% বেশি। এই রাস্তাগুলো এমন উপকরণ দিয়ে নির্মিত যা সূর্যালোক কম শোষণ করে এবং তাপমাত্রা আশপাশের তুলনায় প্রায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে রাখে। এছাড়া প্রতিফলন ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে সকালে সূর্যের আলো ৩০–৪০% বেশি প্রতিফলিত হয়, যা রাস্তা গরম হওয়া কমায়। এটি শুধু তাপমাত্রাই কমায় না, বরং পরিবেশবান্ধব উপায়ে শক্তি ব্যবহার ও বায়ু দূষণও হ্রাস করে।

২০২৪ সালে চালু হওয়া ‘ফ্লেক্সিবল রাবার রোডস’ প্রকল্পের আওতায় এবার ১৬,০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিশেষ রাবারযুক্ত রাস্তা বসানো হয়েছে, যা নামিরা মসজিদ থেকে মাশায়ের ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত। এতে পুনর্ব্যবহৃত টায়ার ব্যবহার করে এমন রাবারাইজড অ্যাসফল্ট তৈরি হয়েছে, যা পায়ে ধাক্কা শোষণ করে হাঁটার সময় আরামদায়ক অনুভূতি দেয় এবং হাঁটুর ও গোড়ালির জয়েন্টে চাপ কমায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হজের সময় পায়ে ও গোড়ালিতে আঘাত লাগার ৩৮% ঘটনাই ঘটে সাধারণ রাস্তায় হাঁটার ফলে—এই প্রকল্প তা কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, বিশেষ করে বয়স্ক হাজিদের ক্ষেত্রে।

শুধু রাস্তা নয়, হাজিদের আরাম নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ নামিরা মসজিদ থেকে মাশায়ের ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ মিটার এলাকায় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে ‘এয়ার মিস্টিং সিস্টেম’ ও পানির ঝর্ণা স্থাপন করা হয়েছে, যা বায়ুর গুণমান উন্নত করে এবং আশেপাশের তাপমাত্রা হ্রাস করে। এতে হাজিরা হাঁটার সময় ঠান্ডা অনুভব করবেন এবং ক্লান্তি বা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।

আশার বিষয় হলো, ২০২৫ সালের হজ হবে আগামী ১৬ বছরের মধ্যে সর্বশেষ হজ, যা গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে পালিত হচ্ছে। ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডার প্রতি বছর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় ১০–১১ দিন এগিয়ে যায়। ফলে ২০২৬ সাল থেকে হজ ধীরে ধীরে বসন্ত এবং পরে শীত মৌসুমে স্থানান্তরিত হবে। এর ফলে ভবিষ্যতের হাজিরা তুলনামূলকভাবে আরও সহনীয় তাপমাত্রায় হজ পালন করতে পারবেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ এবং মানসিকভাবে অনেক স্বস্তিদায়ক হবে।

সৌদি সরকারের এই উদ্ভাবনী পদক্ষেপগুলো শুধু হজ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করেছে তা নয়, বরং এটি একটি মানবিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশসম্মত হজ ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে উঠে এসেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ অন্যান্য ধর্মীয় বা বড় জনসমাগম কেন্দ্রিক কর্মসূচির জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে। সূত্র: গল্ফ নিউজ

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৪:৫৮   ৩৬ বার পঠিত