
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গরিবের জন্য অনিরাপদ খাদ্য আর মধ্যবিত্তদের জন্য নিরাপদ খাদ্য-এ ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবেনা। সকল মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।
আজ শনিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে খাদ্য সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ৭ম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য আলোচনা প্রায়শই শুধু কৃষিকে কেন্দ্র করে করা হয়, কিন্তু খাদ্য উৎপাদন শুধু কৃষি থেকে আসে না। মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদও খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে একসাথে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কৃষির সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের গুরুত্ব বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয় না।
উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য উৎপাদন এবং জনস্বাস্থ্যের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
তিনি বলেন, সচেতন মানুষ বেশি টাকা দিয়ে হলেও রাসায়নিক পদার্থমুক্ত-এন্টিবায়োটিক মুক্ত মাছ-মাংস পেতে চায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ বা খেটে খাওয়া মানুষ খাদ্য নিরাপদ কিনা সে সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষিতে কীটনাশক এমনকি আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষিতে ক্ষতি হচ্ছে না গবাদিপশু পালনে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক পুকুর, নদী ও নালায় মিশে মাছের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এমনকি কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে মাছ ধরার জন্য, যা নিরাপদ খাদ্যের জন্য অনেক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আধুনিক কৃষির মাধ্যমে সবজি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু একসময় অনেক ঋতুভিত্তিক বা মৌসুমি সবজি ছিল তা এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এই সবজি উৎপাদন করতে হাইব্রিডাইজেশন করা হচ্ছে আর এর ফলে কীটনাশক ব্যবহার করতে বাধ্য । এভাবে খাদ্যের যে আধুনিক ধারণা তৈরি হচ্ছে যা সমস্যায় জর্জরিত। সারা বছর একই প্রকার সবজি বা ফসলের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তা মনোকালচারে পরিণত হবে। খাদ্যকে যেভাবে ম্যানুপুলেট করা হচ্ছে তার পরিবর্তন হওয়া দরকার।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুডের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. খালেদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আলিমুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শোয়েব।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ড্রাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর প্রেসিডেন্ট শামসুল আরেফিন খালেদ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিরডাপের মহাপরিচালক ড. পি.চন্দ্র শেখারা। এসময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষার্থীসহ সরকারি-বেসরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২২:২৭ ১ বার পঠিত