
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) হল সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল চারটার কিছুক্ষণ আগে মওলানা ভাসানী হলের গেস্ট রুমে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।
বৈশাখী অভিযোগ করেন, আমরা জানতাম, নির্বাচনটি হবে পাতানো নির্বাচন। তাজউদ্দীন হলের ভোটার লিস্টে ছবি নেই। তাই ২ ঘণ্টা নির্বাচন বন্ধ ছিল। ২১ নং হলে মব সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর পেছনে ছিল শিবির। জাহানারা ইমাম হলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে। মেঘলার কারচুপির কারণে নির্বাচন বন্ধ ছিল। মেয়েদের হলে আইডি কার্ড চেঞ্জ করে একই মেয়ে বারবার ভোট দেয়ার পরও প্রশাসন কিছু বলেনি। ভোট কারচুপির অভিযোগে তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করলাম।
সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পর সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেন, এখন জাকসুতে ছাত্রদলের প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন কিনা। তবে এই প্রশ্নের জবাব তারা দেননি। তারা জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব তারা পরে দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী মো. সাজ্জাদউল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে অনিয়ম-অসঙ্গতির অভিযোগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বরাবর একটি আবেদনও করেছেন। ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন শেখ সাদী, বৈশাখী এবং সাজ্জাদ।
এতে তারা যে ৯টি অসঙ্গতির কথা বলেছেন তার মধ্যে আছে যথাসময়ে ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ঢুকতে না দেয়া এবং প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে না দেয়ার কথা।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করেন, ‘ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নির্বাচন কমিশনার জামায়াতে ইসলামীর এক কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করে। ছাত্রশিবিরকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ভোট গণনায় কারচুপির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু একই কোম্পানির ব্যালটপেপার দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
ছাত্রশিবির তাদের কোম্পানি থেকে আলাদা করে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হওয়ার জন্য নীলনকশা এঁকেছে বলেও অভিযোগ তোলেন ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী।
তিনি বলেন, ‘নতুন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের দাবি জানালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের কোম্পানির ব্যালট দিয়েই ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এইরকম পক্ষপাতমূলক আচরণের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছি।’
নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে ও ছাত্রশিবিরের নীলনকশা বাস্তবায়নে অপচেষ্টা চালাবে না বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ সাদী।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান করছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত।’
সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের ২২৪টি বুথে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৭ জন।
বিভিন্ন পদে মোট ১৭৮ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১০ জন।
ভোটাররা কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দেবেন (টিক চিহ্ন দিবেন)। বিশেষ ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হবে।
জাকসুর মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ ছাত্রী, বাকি ৭৫ শতাংশই ছাত্র। ভিপি পদে কোনো নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হননি। জিএস পদে ১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মেয়ে দুজন। আর চারটি পদে কোনো মেয়ে প্রার্থীই নেই। সবগুলো হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থীর ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছাত্রী। আর মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫ পদে প্রার্থীই নেই। নির্বাচনে বাম, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট আটটি প্যানেল অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৮:১৭ ৪ বার পঠিত