
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শেষের রোমাঞ্চে রুদ্ধশ্বাস এক জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল বাংলাদেশ।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা অত ভালোভাবে করতে পারেনি বাংলাদেশ। দলীয় ১০ রানের মাথাতে ভেঙেছে তানজিদ হাসান তামিম এবং পারভেজ হোসেন ইমনের ওপেনিং জুটি। ১১ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তানজিদ। তাকেকে ফেরান আসিথা ফার্নান্দো।
এরপর তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে সাথে নিয়ে এগোতে থাকেন ইমন। ভালোই যাচ্ছিল দুজনের জুটি। দারুণ সাবলীল ছিলেন ইমন। উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শট খেলে তুলছিলেন রান।
শান্তর শুরুটাও ভালোই হয়েছিল, দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস।
তবে আরও একবার ভালো শুরুর পর অল্পতে থেমেছেন শান্ত। দলের ৭৩ রানের মাথাতে ১৯ বলে ১৪ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্তকে ফিরিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। এরপর ইমনের সাথে যোগ দেন তাওহিদ হৃদয়।
দারুণ সাবলীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি ছুঁয়েছেন ইমন।
দারুণ খেলতে থাকা ইমন ফিফটির পর থেমেছেন। দলের ১১০ রানের মাথাতে ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। ইমনকে ফিরিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
এরপর জুটি বাঁধেন তাওহিদ হৃদয় এবং অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি অধিনায়ক। ১০ বলে ৯ রান করে দলের ১২৬ রানের মাথাতে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মিরাজ। মিরাজকে ফেরান দুশমন্থ চামিরা।
ক্রিজে টিকে ছিলেন হৃদয়। ধীরেসুস্থে সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগিয়েছেন হৃদয়। তার সাথে যোগ দেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। শামীম কিছুটা ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে এগিয়েছেন। হৃদয় বেশি বড় শট না খেললেও স্ট্রাইক রোটেট করে খেলে গেছেন। শামীমের ইনিংস তেমন লম্বা হয়নি। ২৩ বলে ২২ রান করে দলীয় ১৫৯ রানের মাথাতে আউট হয়েছেন শামীম পাটোয়ারী। তাকে ফেরান আসিথা ফার্নান্দো।
এরপর নামেন জাকের আলী অনিক। হৃদয়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়েছেন জাকের। দুজনকেই ভালো রকমের সংগ্রাম করতে হয়েছে। তবুও উইকেট আঁকড়ে পড়ে ছিলেন দুজন। দলের ২০৪ রানের মাথাতে থামেন জাকের আলী। ৪০ বলে ২৪ রান করে বিদায় নেন তিনি।
হৃদয় টিকে ছিলেন। লড়াকু ব্যাটিংয়ে ছুঁয়েছেন ফিফটি। তবে ফিফটির পরেই বাঁধে বিপত্তি। তানজিম হাসান সাকিবের সাথে ভুল বোঝাবোঝির ফলে রান আউট হয়ে যান হৃদয়। ৬৭ বলে ৫১ রান করে বিদায় নেন তিনি। দলের রান তখন কেবল ২১২। ২৫০ রানের আশা করাও তখন হয়ে যায় বেশ কঠিন ব্যাপার।
তখন ত্রাতা হয়ে আভির্ভূত হন তানজিম হাসান সাকিব। ২১ বলে ৩৩ রানের হার না মানা ইনিংসে দলের রান আড়াইশর কাছাকাছি নিয়ে যান তানজিম সাকিব। ২ চারের সাথে ২ ছক্কার মারে ২১ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ২৪৮ রানের মাথাতে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন আসিথা ফার্নান্দো। ৩ উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ১টি করে উইকেট তুলেছেন দুশমন্থ চামিরা এবং চারিথ আসালাঙ্কা।
জবাব দিতে নামা লঙ্কানদের প্রথম আঘাত দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। ৮ বলে ৫ রান করা পাথুম নিসাঙ্কাকে দলের ৬ রানের মাথাতে ফেরান তানজিম। এরপর নিশান মাদুশকার সাথে জুটি বাঁধেন কুশল মেন্ডিস। শুরুতে কিছুটা রয়েসয়ে খেলেছেন মাদুশকা। সময়ের সাথে সাথে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন।
আরেক প্রান্তে কুশল মেন্ডিস চালিয়েছেন ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং। কুশলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সুবাদে দ্রুত গতিতে রান উঠেছে দলের বোর্ডে। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা মাদুশকা এবং কুশলকে নিজের টানা দুই ওভারে ফিরিয়েছেন তানভীর ইসলাম। দলের ৭৫ রানের মাথাতে ২৫ বলে ১৭ রান করে আউট হয়েছে মাদুশকা। ৩১ বলে ৫৬ রান করা কুশল থামেন দলের ৮২ রানের মাথাতে।
এরপর কিছুটা ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। টানা ডট বলের ফলে লঙ্কানদের উপর চাপ বাড়ে। অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার সাথে ক্রিজে জুটি বাঁধেন কামিন্দু মেন্ডিস। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আসালাঙ্কা এবার বেশি কিছু করতে পারেননি। তাকে ফিরিয়েছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। ১৭ বলে ৬ রান করে বিদায় নেন আসালাঙ্কা।
মাঝে ৫১ বল বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। সেই খরা কাটিয়েছেন কামিন্দু মেন্ডিস, রিভার্স সুইপে ইনিংসের ২২তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে চার মারেন কামিন্দু। ছয় নম্বরে নেমে কামিন্দুর সাথে জুটি বাঁধেন জানিথ লিয়ানাগে। সময়ের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকেন কামিন্দু। লড়াই চালিয়ে রানও বের করছিলেন।
একাধিকবার কামিন্দুকে আউট করার সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। অবশেষে দলের ১২৬ রানের মাথাতে ৫১ বলে ৩৩ রান করা কামিন্দুকে ফেরান তানভীর ইসলাম।
দুই স্পিনার শামীম এবং তানভীর ক্রমাগত ডট বল করে গেছেন। একের পর এক ডট বলে লঙ্কানদের উপর চাপ বাড়িয়েছে। সেই চাপ বাড়তে বাড়তে পরিণত হয়েছে পাহাড়ে। ফল হিসেবে এসেছে উইকেট। কামিন্দুর পর দুনিথ ভেল্লালাগেকেও আউট করেছেন তানভীর। ১০ বলে ১ রান করে দলের ১৩২ রানের মাথাতে আউট হয়েছেন ভেল্লালাগে।
এরপর জুটি বেঁধেছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এবং লিয়ানাগে। ১৬ বলে ১৩ রান করা হাসারাঙ্গাকে থামিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক মিরাজ। দলের ১৫৬ রানের মাথাতে বিদায় নিয়েছেন হাসারাঙ্গা।
ক্রিজে টিকে ছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। এত এত উইকেটের পতনের মাঝে অটল ছিলেন লিয়ানাগে। আরেক প্রান্তে ব্যাটাররা বেশি সুবিধা করতে পারছিলেন না। মাহিশ থিকশানাকে ফেরান তানভীর, তুলে নেন নিজের ৫ম উইকেট। ১২ বলে ২ রান করে বিদায় নেন থিকশানা।
শ্রীলঙ্কার শেষ ভরসা হিসেবে টিকে ছিলেন লিয়ানাগে। ক্রমাগত ডট বলে লঙ্কানদের উপর চাপ বাড়িয়েছেন টাইগার বোলাররা। এতকিছুর পরেও ছুটেছে লিয়ানাগের উইলো। দারুণ কার্যকরী ব্যাটিংয়ে দলের জেতার আশা জিইয়ে রাখেন লিয়ানাগে।
শেষ দিকেও ছুটেছেন লিয়ানাগে, ছুঁয়েছেন ফিফটি। দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন দুশমন্থ চামিরা। শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ২৭ রান। বোলিংয়ে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম বলেই ছাক্কা হাঁকান লিয়ানাগে। পরের বলেই তাকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। ১৬ বলে দরকার ২১ রান। ওভারের বাকি ৪ বল থেকে আসে ২ রান। ২ ওভারে দরকার ১৯ রান, বোলিংয়ে আসেন তানজিম। প্রথম ৪ বল থেকে আসে ২ রান। ওভারের ৫ম বলে ৩১ বলে ১৩ রান করা চামিরাকে বোল্ড করেন তানজিম সাকিব। জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। ১৬ রানে জয়লাভ করে টাইগাররা। সিরিজেও ফেরে সমতা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫১:০৩ ৭ বার পঠিত